খাস জমি চেনার উপায় | খাস জমি রেকর্ড করার নিয়ম ২০২৫
কোন খাস জমি বা সরকারি জমি ভোগদখল করতে চাচ্ছেন? তাহলে খাস জমি চেনার উপায় এবং খাস জমির রেকর্ড করার নিয়ম সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন এখানে।
বাংলাদেশের আয়তনের মধ্যে প্রায় অধিকাংশ জমিই খাস জমি হিসেবে সরকারের হাতে নেস্ত রয়েছে। এ ধরনের জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন নয় এবং বেচা-কেনাও করা যায়না। তবে কেউ চাইলে নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করে এ ধরনের জমি ৯৯ বছরের জন্য ভোগ-দখল করতে পারবে।
তাই আপনিও যদি খাস জমির সুবিধা উপভোগ করতে চান, তাহলে এখানে জেনে নিন খাস জমি কি, খাস জমি চেনার উপায়, খাস জমির রেকর্ড করার নিয়ম এবং রেকর্ড করতে কত টাকা লাগে, খাস জমির দাগ নম্বর ও খতিয়ান নম্বর কত ইত্যাদি সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য।
খাস জমি কি?
বাংলাদেশের যে সকল জমি কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের মালিকানাধীন নয় বরং সরকারি মালিকানাধীন, সে সকল জমিকে খাস জমি বলা হয়। খাস জমি রাষ্ট্রীয় ক্ষমতার আওতাভুক্ত হয়।
এ ধরনের জমি ক্রয়-বিক্রয় করা যায় না। তবে এ ধরনের ভাড়া/ লিজ নেওয়া যায়। খাস জমি লিজ নিলে যে পরিমাণ ভাড়া দেওয়া হয় তা রাষ্ট্রীয় কোষাগারে যুক্ত করা হয়। সাধারণত সর্বোচ্চ ৯৯ বছরের জন্য পর্যন্ত খাস জমি লিজ নেওয়া যায়।
খাস জমি চেনার উপায়
বহিঃস্থ উপায়ে কোন জমি দেখে সেটি খাস জমি কিনা তা বোঝা যায় না। সাধারণত খতিয়ান নং ও দাগ নম্বর যাচাই করে জানা যায় কোন জমিটি খাস জমি। এছাড়াও নিকটস্থ ইউনিয়ন পরিষদে/ ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে কোনগুলো খাস জমি তা জেনে নিতে পারবেন।
খাস জমির খতিয়ান নং হয় ‘১’। আবার খাসির জমির দাগ নম্বরের স্থানে শুধু ‘খাস’ লেখা থাকে। তাই যে সকল জমির ই পর্চা খতিয়ানে খতিয়ান নং- ‘১’ লেখা থাকে এবং দাগ নাম্বারের স্থানে কোন সংখ্যা ছাড়া শুধু ‘খাস’ লেখা থাকে, সেগুলোই খাস জমি হিসেবে চিনতে পারবেন।
আপনি যদি কখনো কোন খাস জমি লিজ নিতে চান, তাহলে প্রথমেই সে জমির খতিয়ান নং ও দাগ নম্বর অনলাইনে চেক করে নিবেন। এছাড়াও স্থানীয় ভূমি অফিসে যোগাযোগ করে নিশ্চিত হয়ে নিবেন।
খাস জমির মালিক কে?
সাধারণত খাস জমির নির্দিষ্ট কোন মালিক বা ভোগ দখলকারী থাকে না। বরং এটি রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন থাকে। সমগ্র দুনিয়ার মালিক মহান সৃষ্টিকর্তা, তাই পৃথিবীর কেউই জমির স্বত্বাধিকার নয়। তবে আমরা শুধু মাত্র ভোগ দখলকারী হিসেবে জমির সুবিধা ভোগ করে থাকি।
খাস জমির তেমন কোনো নির্দিষ্ট ভোগ-দখলকারীও নেই। এই জমি শুধুমাত্র সরকারিভাবে ব্যবহৃত জমির তালিকায় লিপিবদ্ধ থাকে। এই ধরনের জমি বিক্রি বা হস্তান্তর যোগ্য নয়। তবে কেউ যদি এ ধরনের জমি লিজ নিয়ে ব্যবহার করে, তাহলে সর্বোচ্চ ৯৯ বছর পর্যন্ত ভোগ-দখলকারী হিসেবে ব্যবহার করতে পারবে। তবে এ ধরনের জমি ব্যবহারের বিনিময়ে সরকারি খাতে ভাড়ার টাকা দিতে হবে।
আরও পড়ুনঃ
খাস জমি কত প্রকার?
খাস জমি প্রধানত ২ প্রকারের হয়, কৃষি জমি ও অকৃষি জন্য। তবে অবস্থান ও ধরনের ভিত্তিতে এগুলোকে ৪ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা:
- কৃষি জমি
- অকৃষি জমি
- নদী-নালা ও রাস্তাঘাট
- নদী ভাঙনের ফলে সৃষ্ট জমি
খাস জমির তালিকা
নিচে ৪ প্রকারের খাস জমিগুলো সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত ধারণা দিয়ে বুঝিয়ে দেওয়া হলো:
- কৃষি জমি: যে সকল জমিতে কৃষি কাজ বা ফসল আবাদ করা সম্ভব, এমন জমির ক্ষমতা দেশের সরকারের হাতে নাস্তা থাকলে, সেগুলোকে কৃষি খাস জমি বলা হয়।
- অকৃষি জমি: যে সকল জমিতে কৃষি কাজ বা ফসল আবাদ করা সম্ভব, এমন জমির ক্ষমতা দেশের সরকারের হাতে নাস্তা থাকলে, সেগুলোকে কৃষি খাস জমি বলা হয়।
- নদী-নালা ও রাস্তাঘাট: দেশের সকল রাস্তাঘাট ও নদী-নালা খাস জমির অন্তর্ভুক্ত। তবে যে সকল জমি বাড়ির পাশের পুকুর কিংবা সাধারণ মানুষের ভোগ দখলের রয়েছে সেগুলো ব্যক্তি মালিকানাধীন হিসেবে গণ্য হবে।
- নদী ভাঙনের ফলে সৃষ্ট জমি: দেশের বিভিন্ন প্রান্তে সারাবছরই নদী ভাঙন হয়ে থাকে। নদীর ভাঙনের ফলে নদীর পাড়ের বাড়িঘর ভেঙে তা নদীর পানিতে তলিয়ে যায়। এর ফলে নদী প্রসারিত হয়ে যেই বাড়তি জায়গা তৈরি হয়, সেগুলো খাস জমির অন্তর্ভুক্ত হবে।
খাস জমি কি বিক্রি করা যায়?
অনেকের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে যে খাস জমি বিক্রি করা যায় কিনা? এর উত্তর হবে যে, জমি কখনোই বিক্রি করা যায় না। কারণ এটি রাষ্ট্রীয় সম্পদ হিসেবে সরকারের হাতে নেস্ত থাকে। এই ধরনের জমি ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি না হওয়ায় বেচাকেনা করার কোন সুযোগ নেই।
কেউ যদি কোন খাস জমি নিজের বলে দাবি করে বিক্রি করতে চায়, তাহলে তাকে আইনত দন্ড দেওয়া যাবে এবং সরকারিভাবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যাবে। তাই কেউ যদি খাস জমি বিক্রির নামে আপনার সাথে প্রতারণা করতে চায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবেন।
অন্যদিকে, কেউ চাইলে খাস জমি লিজ নিয়ে ব্যবহার করতে পারবে। এক্ষেত্রে কিছু শর্ত পূরণ করে নির্দিষ্ট ভাড়ার বিনিময়ে সর্বোচ্চ ৯৯ বছরের জন্য লিজ নেওয়া যাবে।
খাস জমি রেকর্ড করার নিয়ম
কেউ যদি খাস জমি লিজ নিয়ে ব্যবহার করতে চায়, তাহলে অনলাইনে জমির রেকর্ডে তার নাম আপডেট করা গুরুত্বপূর্ণ। খাস জমির রেকর্ড করার জন্য সর্বপ্রথম আপনাকে জেলা প্রশাসকের নিকট আবেদন করতে হবে।
তারপর সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসক সেই আবেদনের তথ্য ও অন্যান্য ডকুমেন্টস পর্যবেক্ষণ করবে। তারপর কর্তৃপক্ষ সেই আবেদন এপ্রুভ করলে, প্রয়োজনীয় ফি জমা দিয়ে এবং অন্যান্য শর্তাবলী পূরণ করে নামজারি রেকর্ড করার জন্য mutation.land.gov.bd আবেদন করতে হবে। অনলাইনে খাস জমির ই নামজারি আবেদন প্রক্রিয়া অন্যান্য সাধারণ জমির মতোই।
খাস জমি বন্দোবস্ত প্রক্রিয়া

খাস জমি রেকর্ড করতে কত টাকা লাগে?
খাস জমি রেকর্ড করতে বা খাস জমির জন্য এই নাম জানি আবেদন করতে সর্বমোট ১,১৭০ টাকা লাগে। এর মধ্যে ২০ টাকা কোর্ট ফি, ৫০ টাকা নোটিশ জারি ফি, ১,০০০ টাকা জমির রেকর্ড সংশোধন ফি এবং ১০০ টাকা নামজারি খতিয়ান প্রস্তুতের ফি।
সরকারি খাস জমি লিজ নেয়ার নিয়ম | খাস জমি দখল আইন
লিজ নিয়ে খাস জমি দখল করার জন্য বা ব্যবহার করার জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। যেমন-
- আবেদনকারীকে ভূমিহীন কিংবা ১০ শতকের কম জমির ভোগদখলকারী হতে হবে।
- জমি দখলে নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট লিজ নেওয়ার আবেদন করতে হবে।
- আবেদন এপ্রুভ হলে নামজারির আবেদন করতে হবে
- সর্বশেষে, নামজারি খতিয়ান আপডেট করে খাস জমির রেকর্ডে আবেদনকারীর নাম যুক্ত করা হলে, আবেদনকারী ব্যক্তি ৯৯ বছরের জন্য এই জমি দখল করতে পারবে।
FAQ’s
খাস জমির খতিয়ান নম্বর কত?
বাংলাদেশের সকল খাস জমির খতিয়ান নম্বর হলো ‘১’। তাই যে সকল জমির খতিয়ান নাম্বার ‘১’ দেখতে পাবেন সেগুলোই খাস জমি হিসেবে বিবেচিত হবে।
খাস জমি দলিল করার নিয়ম কি?
খাস জমি দলিল করা যায় না। তবে যারা এ ধরনের জমি লিজ নিয়ে ব্যবহার করতে চায়, তারা অনলাইনে ই নামজারির আবেদন করে নিজেদের নামে জমির রেকর্ড করে নিতে পারবেন। এভাবে ৯৯ বছর পর্যন্ত জমির ভোগ-দখলের সুযোগ পাওয়া যাবে। তবে কোন দলিল পাওয়া যাবে না।
খাস জমির দাগ নাম্বার কত?
খাস জমির কোন দাগ নাম্বার খতিয়ানের মধ্যে উল্লেখিত থাকে না। বরং দাগ নাম্বারের স্থানে শুধুমাত্র ‘খাস’ শব্দটি লেখা দেখতে পাবেন।